Inspirational journeys

Follow the stories of academics and their research expeditions

ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির রহস্য(the Big Bang)

MD. Mushahid Mojumdar

Sat, 23 Nov 2024

ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির রহস্য(the Big Bang)

আজ থেকে প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে একটি গোলক যেটি হলো আমাদের অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড। পরমাণুর থেকেও ছোট এই গোলকটি সুপ্ত অবস্থায় আছে।কিছুক্ষণের মধ্যে সবকিছু ঘটতে চলেছে। এখানে সময়ের কোনো অস্তিত্ব নেই।আর এখনই আমাদের পৃথিবী,আমাদের ব্রহ্মাণ্ড সবকিছুই এই ছোট গোলক থেকে সৃষ্টি হতে চলেছে। কোন একটা রহস্যময় কারণের জন্য একটা পরমাণুর থেকেও ছোট গোলক হঠাৎ তার নিজস্ব অস্তিত্ব ফিরে পায়। এক সেকেন্ডেরও এক কোটি ভাগের এক ভাগের মতো সময়ের মধ্যে একটি বিস্ফোরণের পরে ব্রহ্মাণ্ড চারিদিকে ছড়িয়ে যেতে শুরু করে।যাকে আজ আমরা বলে থাকি দ্যা বিগ ব্যাং।এই সময় যা যা ব্লাস্ট হয়েছিল সে সবকিছুই ছিল এনার্জি। একেবারে পিওর এনার্জি।বিস্ফোরণের পর এই এনার্জি চারিদিকে ছড়িয়ে যায়।আর ঠিক এই সময় আমাদের স্পেস বা মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়।এই বিশুদ্ধ এনার্জি কোটি কোটি বছর ধরে চারদিকে ছড়িয়ে যেতে শুরু করে।আর তারপর এরা ধীরে ধীরে ঠান্ডা হতে শুরু করে।আর এই এনার্জি এর জন্য তৈরি হয় ম্যাটার।প্রথমে এরা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন সাব অ্যাটমিক পার্টিক্যাল হিসেবে অস্তিত্বের মধ্যে আসা শুরু করে।তারপর যা তৈরি হয় তাকে আমরা বলি এটম।ইলেকট্রন,প্রোট্রন,নিউট্রন এক জায়গায় ফর্মেশন ঘটিয়ে পরমাণু সৃষ্টি করতে শুরু করে।মূলত প্রথমে দুই ধরনের জিনিস তৈরি হয়েছিল একটা ছিল ম্যাটার এবং আরেকটি ছিল অ্যান্টি ম্যাটার।ম্যাটার হল সেই সমস্ত জিনিসগুলো যা দিয়ে আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ড তৈরি হয়েছে।বাকি বিপরীতে ছিল অ্যান্টি ম্যাটার।যেহেতু ম্যাটার আর অ্যান্টি ম্যাটার দুটোই বিপরীত ধর্মী।তাই যখন এরা একে অপরের সংস্পর্শে আসতো তখনই এরা একে অপরকে ধ্বংস করে দিত।কিন্তু ভাগ্যবশত সে সময় ম্যাটার অ্যান্টি ম্যাটার এর থেকে বেশি ছিল। ম্যাটার ও অ্যান্টি ম্যাটারের এই ধ্বংসাত্মক খেলার পর একটা ম্যাটার অবশিষ্ট থেকে যায়।আর যেহেতু ওকে ধ্বংস করার জন্য আর কোনো অ্যান্টি ম্যাটার ছিল না,সেইজন্য ওই ম্যাটার এর গোলক একটা ভয়ানক বিস্ফোরণ ঘটে।যেটা আমাদের জন্য খুব সৌভাগ্যজনক ছিল।কারণ এখন ওই একটা ম্যাটারের গোলক থেকে আজ সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ড তৈরি হতে চলেছে।ওই একটা ম্যাটারের গোলকের জন্য তারা এবং নক্ষত্রে ভরা এই ব্রহ্মাণ্ড অস্তিত্বের মধ্যে আসে।বিগ ব্যাং এর প্রথম বিস্ফোরণের জন্য মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়।আর ম্যাটারের ওই গোলকটার বিস্ফোরণের জন্য এই ব্রহ্মাণ্ডে গ্রহ,নক্ষত্র,উপগ্রহ ইত্যাদির সৃষ্টি হয়।এই বিস্ফোরণের পর ব্রহ্মাণ্ড আসতে আসতে ঠান্ডা হতে শুরু করে এবং সবশেষে এই ধুলোর মতো দেখতে মনে হওয়া এই ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে একটা অজানা শক্তি কাজ করতে শুরু করে।আর ওই অজানা শক্তির জন্য প্রত্যেকটা অনু-পরমানু একে অপরের কাছে এসে জোট বাঁধতে শুরু করে।একে অপরের দিকে আকর্ষিত হতে শুরু করে আর এই শক্তি অন্য কোন শক্তি ছিল না।এটা ছিল আমাদের সবার পরিচিত মহাকর্ষ বল।দ্য ফোর্স অফ গ্র্যাভিটি। শুরুর দিকে আমাদের ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে বেশিরভাগ হাইড্রোজেনের পরমাণু বিদ্যমান থাকতো।মহাকর্ষ বলের জন্য ওই জায়গায় জায়গায় হাইড্রোজেনের অণুগুলো এক অপরের সঙ্গে জোড়া খায় এবং কম্প্রেসড হতে শুরু করে। যে জায়গায় হাইড্রোজেনের পরমাণু মহাকর্ষ বলের প্রভাবে এসে এক জায়গায় জমতে শুরু করতো। সেই জায়গার তাপমাত্রা লক্ষ লক্ষ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেড়ে যেতো।এভাবে কম্প্রেসড হতে হতে যখন এক জায়গার তাপমাত্রা ১ কোটি ডিগ্রী পর্যন্ত পৌঁছে যায়,তখন এক অদ্ভুত প্রক্রিয়া হওয়া শুরু হয়ে যায়।যাকে আমরা নিউক্লিয়ার ফিউশন বলে থাকি।যার কারণে প্রচুর পরিমাণ এনার্জি রিলিজ হতে শুরু করে এবং এই ব্রহ্মাণ্ডের প্রথম কোন এক তারার সৃষ্টি হয়।প্রথম দিকে ঠিক এভাবে কয়েকশো তারা সৃষ্টি হয়।আর তারপর লক্ষ লক্ষ বছর যেভাবে কাটতে থাকে সেই ভাবে আরো কোটি কোটি তারা মুহূর্তের মধ্যে জন্ম নিতে শুরু করে।এগুলোই সেই তারা যাদের আমরা রাতের আকাশে টিমটিম করতে দেখতে পাই।ধীরে ধীরে এই তারাগুলো মহাকর্ষ বলের প্রভাবে এসে এক অপরের কাছে আসতে শুরু করে।তারপরে এরা একে অপরের কাছে এসে একটা দল হিসেবে থাকতে শুরু করে।বিলিয়ন বিলিয়ন তারা গোষ্ঠী এই মহাকাশের মধ্যে দেখা যেতে শুরু করে।আর বিভিন্ন ধরনের আকারের এবং বিভিন্ন ধরনের সেইপ নিতে শুরু করে।এই গোষ্ঠীগুলোকেই আমরা বলে থাকি দ্য গ্যালাক্সিস।এভাবেই লক্ষ-লক্ষ,কোটি-কোটি,বিলিয়ন-বিলিয়ন গ্যালাক্সির সৃষ্টি হয়।আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে আর এই গ্যালাক্সির সমুদ্রের মধ্যে কোন এক জায়গায় একটা গ্যালাক্সি এর সৃষ্টি হয় যাকে আমরা বলি দা মিল্কিওয়ে।এটা সেই গ্যালাক্সি যেখানে আমরা বসবাস করি। মিল্কিওয়ে এর মধ্যে কোটি কোটি নক্ষত্র তৈরি হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু কয়েক হাজার বছর কেটে যাওয়ার পর মহাকর্ষ তার নিজের শক্তি দেখাতে শুরু করে।যে ধুলোকণা মিল্কিওয়ের মধ্যে ভেসে ভেসে বেড়াচ্ছিল তারাও মহাকর্ষ বলের প্রভাবে একে অপরের কাছে এসে সংকুচিত হতে শুরু করে।আর এই রকম পরিস্থিতির মধ্যে বহু গ্রহ তৈরি হতে শুরু করে।বিভিন্ন উল্কাপিণ্ড এর মতো দেখতে মনে হওয়া টুকরোগুলো মহাকার্ষ বলের প্রভাবে একে অপরের সঙ্গে জোড়া খেতে শুরু করে।আর যখন মিল্কিওয়ের মধ্যে এরকম ধরনের গ্রহের সৃষ্টি হচ্ছিল তখন একটা বিশেষ ধরনের রকি প্ল্যানেট তৈরি হয়। আর তখন কেই বা জানতো এই বিশেষ ধরনের গ্রহটার নাম হতে চলেছে দ্য আর্থ,মানে আমাদের পৃথিবী।আর যেখানে আমরা সবাই জন্মগ্রহণ করতে চলেছি। কঠিন পদার্থগুলো একে অপরের সঙ্গে জুড়ে গ্রহ তো তৈরি হয়ে যায় কিন্তু বেঁচে থাকা যে পিওর হাইড্রোজেনের পরমাণু ছিল সেগুলো একে অপরের সঙ্গে জুড়তে শুরু করে। বেঁচে থাকা হাইড্রোজেন এর পরমাণুগুলো দিয়ে একটা ছোট্ট তারার সৃষ্টি হতে শুরু করে।সমস্ত হাইড্রোজেনের পরমাণু গুলো একে অপরের কাছে আসতে শুরু করে।আর তাপমাত্রা এত বেড়ে যায় যে নিউক্লিয়ার ফিউশন এর শুরুটা হয়েই যায়।একটা নতুন তারা যার নাম আমরা পরে দিই দা সান,মানে সূর্য।সূর্য যখন প্রথম তৈরি হয় তখন একটা বড় সৌর বায়ু আবর্তিত হয় যার ফলে বেশিরভাগ ধুলোর কণা সৌরজগত থেকে ছিটকে বাইরে চলে যায় এবং সৌরজগতের মধ্যে পড়ে থাকে আমাদের গ্রহগুলো এবং উপগ্রহ গুলো।সৌরমণ্ডল সেরকম ধরনের রূপ নিতে শুরু করে যেরকম তখন আমরা দেখি। সৌরজগতের বাইরের দিকে অনেকগুলো গ্যাস দিয়ে তৈরি গ্রহ গুলো তৈরি হয়ে গিয়েছিল।যেমন- বৃহস্পতি,শনি,ইউরেনাস,নেপচুন।আর সৌরমন্ডলের ভেতরের দিকে জন্ম হয় বিভিন্ন রকি প্ল্যানেট।যেমন-বুধ,শুক্র,মঙ্গল এবং আমাদের পৃথিবী।বিগ ব্যাং থেকে জন্ম নেয় ওই ম্যাটার।ওই ম্যাটার থেকে জন্ম নেয় এত নক্ষত্র,গ্রহ এবং উপগ্রহ।আর এভাবেই তৈরি হয় আমাদের পৃথিবী। এটাই আমার,আপনার,আমাদের সবার ইতিহাস।

0 Comments

Leave a comment